রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৪ অপরাহ্ন
নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি) যুগে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রবেশ করেছে প্রায় দশ বছর আগে। তবে এখনও কোনো স্থায়ী রূপ দিতে পারেনি সংস্থাটি। দিন দিন যেমন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, তেমন বড় আকারে সামনে সাইবার সিকিউরিটির বিষয়টিও। আর এজন্য গ্রেট ব্রিটেন থেকে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অভিজ্ঞতা নেবে নির্বাচন কমিশন।
ভোটে প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগে এক-এগারো সময়কার এটিএম শামসুল হুদার কমিশনের সময়। ওই কমিশন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম), ইন্টারনেটে ভোটকেন্দ্র সরাসরি পর্যবেক্ষণ, সিসি (ক্লোজ সার্কিট) টিভির ব্যবহারের প্রচলন করে।
এসবের মধ্যে ইভিএম এখনও পরীক্ষাধীন। সীমিত আকারে এই যন্ত্র বিভিন্ন নির্বাচনে ব্যবহার করে অর্ধেক ভোটারের সাড়া অর্জন করতে সমর্থ হয়েছে ইসি। তবে এটি এখনও স্থায়ী রূপ নেয়নি। কেননা, বুয়েটের তৈরি প্রথম ডিজাইনের ইভিএমটি এখন নেই। সেটি বাতিল করে ত্রুটির কারণ চিহ্নিত করতে না পারায় বর্তমানে যে ভোটিং মেশিনটি ব্যবহার করা হচ্ছে সেটি আগেরটার চেয়ে ২০ গুণ বেশি দামে তৈরি হচ্ছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা দাবি অনুযায়ী, মেশিনটি অনেক উন্নত প্রযুক্তির এবং ইন্টারনেট সংযোগের বাইরে থাকায় হ্যাক করা অসম্ভব। আর এটির ব্যবহার শতভাগ নিশ্চিত করা গেলে ভোট কারচুপি থাকবে না। এটি তৈরিতে সহায়তা করছে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি।
ইভিএম মেশিনটিতে এখন পর্যন্ত জটিল কোনো ত্রুটি দেখা দেয়নি। সব নির্বাচনেই এটি এখন ব্যবহার করা হচ্ছে।
সিসি টিভি ব্যয়বহুল ও ব্যবস্থাপনার জন্য বেশি জনবলের প্রয়োজন পড়ে বিধায় এটির ব্যবহার থেকে বর্তমানে সরে এসেছে ইসি।
ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ঝামেলা এড়াতে বাদ দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেটে ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণও। আগে স্কাইপিতে কেন্দ্র সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা হতো।
নির্বাচন কমিশনের একটি বড় কার্যক্রম হলো জাতীয় পরিচয়পত্র অর্থাৎ, ভোটার ডাটাবেজ পরিচালনা। সারাবিশ্বের মধ্যে যেটি ভোটে প্রযুক্তির ব্যবহারের রোল মডেল। বর্তমানে নির্বাচন কমিশন সব ভোটকেন্দ্রের জন্য ট্যাব কিনেছে। এটি একদম নতুন সংযোজন।
ট্যাব ব্যবহারের জন্য অপারেটিং সিস্টেম, সার্ভার, সফটওয়্যারও কেনা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে অনিয়ম, কারচুপি রোধসহ যে কোনো সমস্যায় এটি ব্যবহার করা যায়। এছাড়া ভোটের ফলাফল তাৎক্ষণিক পাঠানো, ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমেও এটি ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে।
ফলাফল ব্যস্থপনার জন্য রেজাল্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ক্যান্ডিডেট ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমও ব্যবহার করছে ইসি।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনে ট্যাব করছে ইসি। তবে উপজেলা নির্বাচনে তেমন উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি। দ্রুত ফল প্রকাশের জন্য এই যন্ত্র ব্যবহার করা হলেও আরও বিলম্ব হয়েছে কারিগরি ত্রুটির জন্য। নির্বাচন অবশ্য ইন্টারনেট সংযোগ স্লো থাকার ব্যাখ্যা ফল বিলম্বের পেছনে দাঁড় করিয়েছে।
ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সামনে ভোট ব্যবস্থাপনা পুরোটাই আইসিটি নির্ভর হয়ে যাবে। তাই এর সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা ব্যাপকভাবে জড়িয়ে আছে। বর্তমানেও প্রযুক্তির যতটুকু ব্যবহার হচ্ছে, সেখানেও সাইবার অ্যাটাক হলে ঘটতে পারে বিপত্তি। এটি নিশ্চিত করাই হবে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ। আর ভাবনা থেকেই উন্নত বিশ্বের সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে।
ইসির আইসিটি বিভাগও এজন্য প্রস্তুত। চলতি মাসেই এ বিভাগের কর্মকর্তাদের ব্রিটেন পাঠানো হচ্ছে সাইবার নিরাপত্তা শীর্ষক এক বৈঠকে।
সিস্টেম ম্যানেজার (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ আশরাফ হুসাইন ও আইটি পরিচালক মো. মাশায়েখ হোসেনকে সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক ওই বৈঠকে পাঠানো হচ্ছে। আগামী ৩০ ও ৩১ জুলাই লন্ডনে অনুষ্ঠেয় বৈঠকটি আয়োজন কমনওয়েলথ সচিবালয়।
ইসির সহকারী সচিব ফাহমিদা সুলতানা ইতোমধ্যে তাদের ভ্রমণব্যয় সংক্রান্ত চিঠি চিফ অ্যাকাউন্ট কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছেন।
এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেছুর রহমান বলেন, সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত এখন সব ক্ষেত্রেই চ্যালেঞ্জ। সবকিছু যেখানে প্রযুক্তি নির্ভর হয়েছে পড়েছে, সেখানে ভোট ব্যবস্থাপনাতেও যেতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে উন্নত দেশের অভিজ্ঞতা বা যারা আমাদের আগে থেকে প্রযুক্তির ব্যবহার করছে, তাদের অভিজ্ঞতা কাজে দেবে।